হঠাৎ হল ছাড়ার বিড়ম্বনা
মুহাম্মদ মুসা লিখেছেন ইত্তেফাকে
|
![]() রাতে ঘোষণা; সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলো। কিন্তু যানবাহন ভাড়া কাউকে দেওয়া হয়নি। দেওয়ার কথাও নয়। শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। যা প্রতীয়মান হয় শত শত ফেসবুক স্ট্যাটাস ও সাহায্য-আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে। মাসের শেষে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের পকেট খালি থাকে। সাধারণত যারা টিউশনি করেন তারা মাসের প্রথম দশদিন পরে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। এদিকে ২৮ তারিখ সকাল দশটায় হাতেগোনা কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ব্যতীত প্রায় সবাই হল ছেড়েছেন। তবে গ্রামের বাড়িতে যেতে সক্ষম হয়েছেন খুব কমই। বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গেরুয়া-ইসলামনগরের বিভিন্ন মেসে, ঢাকায় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায়। অনেকের জন্য এই আশ্রয়স্থল অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তার কারণ হলো একদিকে অসহ্য গরম, অন্যদিকে রমজান মাস। ফলে খাওয়া ঘুমের অপর্যাপ্ততায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। অনেকের টিউশন থাকায় রোজার শুরুতেই বাড়ি যাওয়া অসম্ভব। অনেকের চলমান পরীক্ষার কয়েকটা বাকি। কারও আবার বিসিএস। অনেকের সারাজীবনের স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার বা একটা ভালো চাকরি। সব মিলিয়ে হল ছাড়লেও ক্যাম্পাসের আশ-পাশে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশকে। এমতাবস্থায় হল খুলে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা যথাযথ অনুমেয়। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়কে জড়িয়ে বেঁচে থাকা পরিবারগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই আরেক করুণ দৃশ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে রিকশাচালক, ভাসমান খুদে ব্যবসায়ী, খাবার হোটেল, চা বিক্রেতাদের উপার্জনের অন্য কোনো উপায় নেই বললেই চলে। অপরদিকে হলের মেসবাবুর্চি-কর্মচারীরা তাদের চাকরি হারিয়ে একরকম নিঃস্ব। এই মানুষগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে স্বপ্ন বুনে। অনেকে হয়ত স্বপ্ন দেখেছিল বেতন-বোনাস পেয়ে পরিবার নিয়ে জমজমাট ঈদ উদযাপন করবেন। হঠাত্ হল বন্ধ ঘোষণা করায় সে আশাটুকুও বিলীন হয়ে গেছে। এখন আর মেস চলছে না, চলছে না বটতলার খাবার দোকানও। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আন্দোলন বন্ধ করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য হল বন্ধ, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা ব্যবস্থাকে পিছিয়ে থাকতে বাধ্য করে। এর আগে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিভিন্ন সময় সৃষ্টি হয়েছে সেশনজট। অনাকাঙ্ক্ষিত আন্দোলন সংগ্রামের ক্ষতিপূরণ করাও রীতিমত অসম্ভব। আর চলমান সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করা কারও কাম্য হতে পারে না। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিকে নজর রেখে শিক্ষাব্যবস্থার গতি সচল রাখতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলা রাখার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই। লেখক :শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় |