ফ্রান্সে কি ভোট বিপ্লব হবে?
গ্যাবি হিনস্লিফ লিখেছেন কালেরকন্ঠে
|
![]() তবে ফ্রান্সে কিন্তু এই অঘটনই ঘটেছে। মানুষ নতুনত্ব চায়, গতানুগতিক নেতৃত্ব থেকে বেরোতে চায়, ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপ তাই প্রমাণ করেছে। ফ্রান্সের এই পপুলিস্ট আন্দোলন কোনো জাতপাত, ক্ষোভ-বিদ্বেষ কিংবা দৃশ্যত নতুন কোনো মহাবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা থেকে কিন্তু গড়ে ওঠেনি। এমানুয়েল মাক্রোঁ একজন সাবেক ব্যাংকার। তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা উল্লেখ করার মতো নয়। থাকার মধ্যে আছে সিনেমার নায়কদের মতো তারকাসুলভ চেহারা! মাত্র এক বছর আগে তিনি গড়ে তুলেছিলেন তাঁর ‘অঁ মারসে’ আন্দোলন; এর আওতায় পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দেখা গেল তাঁর সে আন্দোলন ভালোই দানা বেঁধেছে। কট্টর ডানপন্থী দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রার্থী মারিন ল্য পেনকে তিনি প্রথম দফার ভোটে হারাতে সক্ষম হয়েছেন। দুই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান হয়তো খুব বেশি নয়, কিন্তু মাক্রোঁ তাঁর জয়ের সম্ভাবনা প্রবলভাবেই জাগাতে সক্ষম হয়েছেন। এ কথা সত্যি যে মাক্রোঁ তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার বিশদভাবে তাঁর ভোটারদের সবিস্তারে বলেননি; তবে একধরনের কৌতূহল, তিনি তাদের মধ্যে জাগাতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর এই আকস্মিক জনপ্রিয়তার গ্যাসবেলুন ধীরে ধীরে মিইয়ে আসতেও পারে। জনপ্রিয়তার এই হাইপে তিনি টিকে থাকতে পারুন কি না পারুন, অনেককেই তিনি নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছেন। ইন্টারনেটে তিনি ঝড় বইয়ে দিয়েছেন আলোচনার। কানাডার ‘পিনআপ’ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক ভাইরাল ভিডিওতে আমেরিকার বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, আপনারা ফ্রান্সে যান, মাক্রোঁকে দেখেন! ব্রিটেনেও ওয়েস্টমিনস্টারকে ভাবতে হচ্ছে, ফ্রান্সের মতো এখানেও এমন কিছু ঘটবে না তো সামনের নির্বাচনে? সাবেক চ্যান্সেলর জর্জ অসবর্ণ টুইটারে লিখেছেন, ফ্রান্সের প্রথম ধাপের নির্বাচন প্রমাণ করেছে, মধ্যপন্থী হয়েও জয়লাভ করা যায়। টনি ব্লেয়ার, যিনি কি না গত সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই বলেছেন যে তিনি রাজনীতিতে ফিরতে চান, তাঁর উচিত হবে মাক্রোঁ থেকে সম্ভব হলে কিছু শিক্ষা নেওয়া। ব্রিটেনে লিবারেল ডেমোক্র্যাটকর্মীরা তো রীতিমতো উত্তেজিত। তারা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলোতে চিৎকার করে বলছে : ‘টিম ফ্যারন হচ্ছেন নতুন মাক্রোঁঁ’। অনেক ফরাসি ভোটার মাক্রোঁকে হয়তো এ জন্য ভোট দিয়েছে যে তিনি পোড়খাওয়া কোনো রাজনীতিবিদ নন। ভোটাররা কথার ফুলঝুরি আর মিথ্যা আশ্বাসে প্রলুব্ধ হতে চাইছে না। মাক্রোঁর হাতে কোনো ব্যাগও নেই। মাক্রোঁর ব্যাপারে তথ্যের ঘাটতি যদিও আছে, ভোটাররা ভাবতেই পারে যে তিনি তাদের কথা অন্তত আন্তরিকভাবে শুনবেন। ব্রিটেনের দিক থেকে দেখলে বলা যায়, তাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ফ্রান্সের মতো নয়। ফ্রান্সের নির্বাচনী ব্যবস্থাটাই এমন যে নতুন কোনো দলের পক্ষে ভিনিভিডিভিচি—অর্থাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসার কাজটি বেশি কঠিন নয়। গত এক বছরে রাজনৈতিক অঘটনের খবর যখন নৈমিত্তিক হয়ে গেছে, মাক্রোঁ দেখিয়ে দিয়েছেন যে খারাপ লোকদের সব সময় জেতা উচিত নয়; তারা সব নির্বাচনে জেতেও না; আশা ও আশাবাদের একটি বাজার এখনো রয়ে গেছে। আর এ ক্ষেত্রে মাক্রোঁই একমাত্র উদাহরণ নন। অস্ট্রিয়ার সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে কট্টর ডানপন্থীরা জয়লাভ করতে পারেনি। হল্যান্ডে ভালো করতে পারেননি কট্টর ডানপন্থী নেতা গিয়ারট উইলডারস। এখানে ব্রিটেনে ইউকিপ এমনই অবস্থায় আছে যে নাইজেল ফারাজ সম্ভবত আর ঝুঁকিই নেবেন না পার্লামেন্টের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার। যত দুর্বলতাই থাকুক, মাক্রোঁ জয়লাভ তো করেছেন। এ থেকে এও প্রমাণ হলো যে রাজনীতির পেন্ডুলামে ঘড়ির কাঁটা ঘুরে উল্টো দিকেও যায়। নতুন যে পয়েন্ট এই কাঁটা নির্দেশ করছে তা হয়তো খুব দূরেও নয়। মধ্যপন্থী নবাগত মুখ এমানুয়েল মাক্রোঁর বয়স এখনো ৪০ ছোঁয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্নীতির অভিযোগের কারণে কনজারভেটিভ প্রার্থী ফ্রাঁসোয়া ফিলঁ কোণঠাসা হয়ে পড়ায়ও সুবিধা হয়েছে মাক্রোঁর। অভিবাসী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিরোধী ল্য পেন প্রেসিডেন্টের পদে জিতে এলে অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা ফ্রান্সে খুব ভালো কিছু হতে পারে না বলেই মনে করছেন অনেকে। ২৩.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে থাকা মাক্রোঁই এখন তুরুপের তাস। ইইউপন্থী এই যুবনেতা সে অর্থে কোনো বড় রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়াই উঠে এসেছেন ধূমকেতুর মতো। মনে করা হয়েছিল, কোনো অভিজ্ঞতা নেই এমন একটা মানুষের ওপর কিছুতেই ফরাসি নাগরিকরা ভরসা করবে না। কিন্তু আমজনতা সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে বুঝিয়ে দিয়েছে, এবার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর ওপর তারা আস্থা রাখছে না। সাবেক সরকারি কর্মী মাক্রোঁ অল্প কয়েক বছরেই কোটিপতি ব্যাংক কমকর্তা হয়ে ওঠেন। ওলাঁদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন। তবে সেই সময় বিতর্ক কিছু কম হয়নি। উদারপন্থী কিছু সংস্কারের জেরে সরকারের অন্দরেই বিরাগভাজন হন তিনি। চূড়ান্ত পরীক্ষায় তাঁরই জয় হয় কি না তা জানতে আগামী ৭ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। লেখক : ব্রিটিশ সাংবাদিক, লেখক, গার্ডিয়ানের কলামিস্ট; দ্য পুল ডটকমের রাজনৈতিক সম্পাদক সূত্র : দ্য পুল |