এই গরমে কী খাবেন
মো. সহিদুল ইসলাম
|
![]() তথাপি কেন যেন আমরা প্রচলিত জীবনধারারই অনুসারী। সচরাচর ব্যত্যয় ঘটাতে চাই না এই নিয়ম-নীতির। প্রচলিত প্রাত্যহিক খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত খাদ্যগুলো গ্রহণের ব্যাপারে বলা যায়- একরকম দৃঢ়তাই প্রদর্শন করে থাকি আমরা। হর-হামেশাই ভুলে যাই বা অনীহা দেখাই সহজলভ্য ও সতেজ মৌসুমি ফলমূল, শাক-সবজি বা বিশেষ খাবারের প্রতি। ঋতু বৈচিত্র্যের পালাবদলে আমরা যে সব ফলমূল ও শাক-সবজি পেয়ে থাকি—তা একদিকে যেমন সময়োপযোগী যথার্থ খাবার, অন্যদিকে তেমনি সুস্বাদু এবং ভিটামিন, খনিজ ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। তাছাড়া এগুলোর আছে বাহারি রঙ ও মন মাতানো সৌরভ। যদিও মৌসুমি ফলমূল ও শাক-সবজি সংশ্লিষ্ট সময়ের সেরা খাবার হিসেবে বিবেচিত, তথাপি এগুলো গ্রহণের কিছু ঝুঁকিও আছে বৈকি। অবশ্য এ ঝুঁকিগুলো গুটিকয়েক অসাধু মানুষের লোভ বা নির্বুদ্ধিতার ফলেই সৃষ্ট বলা যায়। ফলমূল ও শাক-সবজিকে দীর্ঘদিন সতেজ রাখতে ক্ষতিকারক রাসায়নিকের যথেচ্ছ ব্যবহার এই ঝুঁকিকে ক্রমশ আরো প্রকট করে তুলছে। যাহোক, পুষ্টিবিদরা গ্রীষ্মকালে বিশেষত গরমের সময় খাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত সেরা একটি খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করেছেন। উক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত খাবারগুলোই আমাদের আজকের প্রধান আলোচ্য বিষয়। যেমন- তরমুজ : রসালো, ঠাণ্ডা এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার হিসেবে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার। ফলটিকে আপনি সালাদ, মিষ্টান্ন, মিল্কসেক এমনকি সালসা হিসেবেও খেতে পারেন। এটা পেটের জন্য যেমনি ভালো তেমনি ওজন কমানোর ব্যাপারেও যথেষ্ট সহায়ক। তাছাড়া ফলটি কিছু ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও প্রশমন করে। ক্যান্সার, উচ্চ রক্ত চাপ এবং হূদরোগ থেকে শুরু করে সাধারণ ঠাণ্ডা-কাঁশি ও ফ্লু জাতীয় জ্বর প্রতিরোধেও তরমুজ বেশ কার্যকরী। লাউ : সম্ভবত এই সবজিটি আপনার পছন্দের তালিকায় নাও থাকতে পারে। তবে জেনে রাখুন, ওজন কমানোর ব্যাপারে এই সবজিটি কিন্তু অনেকাংশেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাছাড়া এ সবজিটি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ভিটামিন এ ও সি সমৃদ্ধ। সবজি জগতের এ সুপারহিরোর যেমনি আছে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা, তেমনি আছে হার্টকে সুস্থ-সবল রাখার ও রক্ত পরিশোধনের আশ্চর্য ক্ষমতা। সালাদ পাতা : বিভিন্ন ফল, সবজি ও বাদামের সঙ্গে লেটুস পাতা, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ও বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন সালাদ পাতা এবং দইয়ের মিশ্রণে তৈরি মুখরোচক সালাদের ডিস্ক আমাদের অনেকের নিকটই প্রিয়। এই ধরনের ডিস্ক শরীরের পক্ষেও বেশ উপকারী। তাইতো এই ধরনের ডিস্ককে পুষ্টি বিজ্ঞানীরা শরীরে পুষ্টি তৈরির কারখানা হিসেবে নামকরণ করেন। তরমুজের জুস : তরমুজে সাধারণত ৯০ শতাংশ হারে পানি থাকে। সুতরাং গরমে নিজেকে ডি-হাইড্রেশনমুক্ত রাখতে সন্দেহাতীতভাবেই এটা বেশ কার্যকরী। পাকস্থলিকে ঠাণ্ডা রাখার পাশাপাশি তরমুজ হজমেও বেশ সহায়ক। পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলেন, চর্ম সুরক্ষায় তরমুজের রয়েছে বহুবিদ উপকারিতা। মুখের বলীরেখা, ফ্যাকাশে ভাব, কুঞ্চন ও ব্রন দূরীকরণে সর্বোপরি শরীরের চামড়ার লাবণ্য বৃদ্ধিতে ও বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে তরমুজ অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। পুষ্টি বিজ্ঞানী নীহারিকা বলেন, প্রত্যেকেরই উচিত প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস বরফমিশ্রিত তরমুজের জুস পান করা। আমের জুস : স্বাদ ও পুষ্টিগুণে অতুলনীয় একটি ফল আম। তাছাড়া আমের আছে বিশেষ ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কোষ্ঠকাঠিন্য এবং আইবিএস -এর মতো দীর্ঘস্থায়ী পেটের পীড়া নিরাময়ে প্রতিদিন দুই গ্লাস আমের জুস গ্রহণই যথেষ্ট বলে মনে করেন পুষ্টি বিজ্ঞানীরা। লেবুর রস মিশ্রিত পুদিনা পানি : দুই ফোঁটা লেবুর রস মিশ্রিত পুদিনা পানির উপকারিতা বেশ বিস্ময়যোগ্য। লিভার পরিষ্কার থেকে শুরু করে এই পানীয়ের আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ক্ষুধা বৃদ্ধি করার মতো সক্ষমতা। বার্লি পানি : কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে বার্লি পানির রয়েছে আশ্চর্য ক্ষমতা। দ্রুত উপকারিতা পেতে প্রতিদিন কমপক্ষে আপনি দুই গ্লাস বার্লি পানি খেতে পারেন। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য পানীয়টির সঙ্গে আপনি মিশিয়ে নিতে পারেন প্রয়োজনমত লেবু ও মধু। অতএব, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আজ থেকেই শুরু করুন এই সব খাদ্য গ্রহণ। অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার হলো সুস্বাস্থ্য রক্ষার পূর্বশর্ত। (সূত্র: এনডিটিভির খাদ্য পাতা) লেখক : সাংবাদিক |